ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ ফ্রিল্যান্সিংয়ে হাতেখড়ি
কাজ পাব কোথায়
অনলাইনে কাজ করার মতো অনেক মার্কেটপ্লেস আছে, সেগুলোতেই সাধারণত বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সার কাজ পান। এ ছাড়া অনেকেই নিজের ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন ইত্যাদি) সরাসরি ক্লায়েন্ট বা গ্রাহক বা নিয়োগকারী খুঁজে তাদের চাহিদামতো কাজ করেন। অনলাইনে ফ্রিল্যান্স কাজ খুঁজে পাওয়ার জন্য বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য মার্কেটপ্লেস রয়েছে। এসব মার্কেটপ্লেসে কাজ করার পর অর্থ পেতে কোনো সমস্যা হয় না। এগুলো হলো upwork.com, freelancer.com, fiverr.com, peopleperhour.com এবং guru.com।
এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে চাইলেই কাজ পাওয়া যায় না। কাজ পাওয়ার জন্য আপনি যে বিষয়ে দক্ষ তা উল্লেখ করে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এরপর কর্মী নিয়োগকারীদের চাহিদার সঙ্গে নিজের দক্ষতা মিলে গেলে কাজটি করার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনার দক্ষতা বিবেচনা করে যোগ্য মনে করলেই নিয়োগকারী আপনাকে কাজ করার সুযোগ দেবে। তবে এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, নিয়োগকারীর শর্ত মেনে অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য আপনাকে কাজটি জমা দিতে হবে।
অনলাইনে যেসব কাজের সুযোগ রয়েছে
অনলাইনের বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়। লেখালেখি, গ্রাফিকসের পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গান সম্পাদনা, থ্রিডি অ্যানিমেশন, ডেটা এন্ট্রি, লিড জেনারেশন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) ইত্যাদি কাজ রয়েছে অনলাইনে। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসের জব সেকশনে ঢুঁ মারলে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
পূর্ণকালীন ও ফ্রিল্যান্স কাজের পার্থক্য কোথায়
পূর্ণকালীন ও ফ্রিল্যান্স কাজের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে পূর্ণকালীন কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে গিয়ে কাজ করতে হবে। অপর দিকে ফ্রিল্যান্স কাজ করার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। আপনার সুবিধামতো সময়ে কাজ করা যাবে। তবে প্রতিষ্ঠানে দলগতভাবে কাজের সুযোগ থাকায় বিভিন্ন জনের সহায়তা পাওয়া যায়, কিন্তু ফ্রিল্যান্স কাজ করার সময় নিজেকেই সব কাজ করতে হয়। শুধু তা–ই নয়, নিয়োগদাতার সঙ্গে আলোচনা করে তার চাহিদামতো কাজ করারও দক্ষতা থাকতে হয়, যা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
অনেক ক্ষেত্রে সময়ের তারতম্যের কারণে বিভিন্ন দেশের নিয়োগদাতার জন্য গভীর রাতেও কাজ করতে হতে পারে। তবে যত সমস্যাই হোক না কেন, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে। দক্ষতা ও ধৈর্য থাকলে এ পেশায় প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির তুলনায় বেশি আয় করা যায়। চাইলে নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি আয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো করার জন্য বেশ সময় লাগে। আর তাই ধৈর্য নিয়ে কাজ করার মনোভাব থাকলেই কেবল ফ্রিল্যান্স কাজ করা উচিত।
নিজেকে ফ্রিল্যান্স কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা
অনেকেই মনে করেন, স্বল্প সময় দিয়ে ফ্রিল্যান্স মার্কেটে কাজ করে অর্থ আয় করবেন। তবে বাস্তবতা হলো, অল্প সময় দিয়ে এ সেক্টরে টিকে থাকা অনেক কষ্টের বা প্রায় অসম্ভব। আমার দেখা শত শত মানুষ আছেন, যাঁরা ভালো কাজ জানেন, তারপরেও পূর্ণকালীন কাজের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে তা করতে পারেননি। এই খাতে মনোযোগ, সময় দেওয়া ও আগ্রহ ছাড়া এগিয়ে যাওয়া অনেক অনেক কঠিন। তো কেউ যদি ভেবে থাকেন কিছু অবসর সময়ে, পড়াশোনার পাশাপাশি বা বাসার কাজ শেষ করে অল্প কিছু সময় ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করবেন, তাঁদের বলব, সে ক্ষেত্রে এ খাত থেকে খুব বেশি কিছু আশা না করে কাজ করে যাওয়াই ভালো হবে। কিছু পেলে খুশি থাকলেন, আর না পেলে অভিযোগ করার কিছু নেই।
নিজেকে যদি এই খাতের ‘রকস্টার’ বানাতে চান, তাহলে সময় দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। চিকিৎসক, প্রকৌশলীদের মতো প্রতিনিয়ত পড়াশোনা ও গবেষণার ওপর থাকতে হবে। আর ভালো একটা সময় দিতে হবে এর পেছনে। নিজের মূল দক্ষতা, এর পাশাপাশি ইংরেজিতে কথা বলা ও লিখতে পারা, নিজের কাজ বিপণন করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া, প্রতিনিয়ত ভালো কাজ করে গ্রাহকের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক (রিভিউ) আদায় করা, পেশাদারিভাবে কাজ করা এবং পুরো প্রক্রিয়াটিতে পেশাদার থাকা; এসব কিছুর সংমিশ্রণই একজন ভালো ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনাকে গড়ে তুলবে এবং আপনিও হতে পারবেন এই খাতের একজন রকস্টার।
আপনি নিজে যে কাজ পারেন, সে কাজের চাহিদা ফ্রিল্যান্স মার্কেটে আছে কি না, সেটা বের করার চেষ্টা করুন। আর যদি আপনি যে কাজ পারেন, সে কাজ ফ্রিল্যান্স মার্কেটে চাহিদা না থাকে, তবে আপনার দক্ষতার সবচেয়ে কাছাকাছি কী কাজ মার্কেটপ্লেসে আছে, সে কাজ শেখার প্রস্তুতি নিন।
চলবে..
লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার
পরের পর্ব: আমি কি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবো
0 Response to "ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ ফ্রিল্যান্সিংয়ে হাতেখড়ি"
Post a Comment