-->

Nativ

Banner 160*300

(ASCC TV NEWS).প্রথম     অধ্যায়ঃ     দুনিয়াতে    আগমনের    পূর্বে নবীজির মর্যাদা
নূরে মোহাম্মদী আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি

(ASCC TV NEWS).প্রথম     অধ্যায়ঃ     দুনিয়াতে    আগমনের    পূর্বে নবীজির মর্যাদা নূরে মোহাম্মদী আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি


★★প্রথম     অধ্যায়ঃ     দুনিয়াতে    আগমনের    পূর্বে নবীজির মর্যাদা
নূরে মোহাম্মদী আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি ★★

এই   বিশ্বজাহানের    অস্তিত্ব  এক  সময়  ছিলো  না। ছিলেন শুধু এক আল্লাহ, যিনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের একক প্রভু। যার কোন শরীক  নেই। যিনি এক ও অদ্বিতীয়। সে সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইচ্ছা করলেন     নিজের     পরিচয়    কারো     কাছে    প্রকাশ করতে।  কিন্তু তখন তো   এক  আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ  ছিলো   না।  তাই আল্লাহ পাক মাখলুক  সৃষ্টি করলেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসে কুদসীতে এসেছে-
كُنْتُ كَنْزًا مَّخْفِيًّا فَأَحْبَبْتُ اَنْ اُعْرَفَ فَخَلَقْتُ الْخَلْقَ لاِعْرَفَ

অর্থাৎ- “আমি ছিলাম এক গুপ্ত ভান্ডার। অতঃপর আমার  ইচ্ছা হলো নিজের  পরিচয় প্রকাশ করতে  অতঃপর    আমি    আমার    পরিচয়    প্রকাশের   জন্য  মাখলুক       সৃষ্টি         করলাম।”        (তাফসীরে       রুহুল মা’আনী, মিরকাত শরহে মিশকাত) 

উক্ত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেছেন যে, আত্নপরিচয়   প্রকাশের   জন্য    তিনি   মাখলুক  সৃষ্টি করলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেই প্রথম সৃষ্টিটা কী? এ প্রসঙ্গে মোহাদ্দেস আবদুর রাজ্জাক যিনি ছিলেন ইমাম    মালেক     রাহমাতুল্লাহি     আলাইহির     ছাত্র,  ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ওস্তাদ ও  ইমাম বোখারী রাহমাতুল্লাহি  আলাইহির দাদা   ওস্তাদ,  তিনি  স্বীয় গ্রন্থ  “আল  মোসান্নাফে” একখানা    হাদীস     সংকলন    করেন।     পরবর্তীতে  ইমাম   কাসতুলানী    রাহমাতুল্লাহি    আলাইহি    স্বীয় গ্রন্থ  “মাওয়াহেবুল  লাদুনিয়্যায়”,  ইমাম  যুরকানী  রাহমাতুল্লাহি       আলাইহি      “শরহুল     মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যায়”,      ইউসুফ        নাবহানী      রাহমাতুল্লাহি আলাইহি   “আনোয়ারে   মোহাম্মদীয়ায়”,     হালভী  রাহমাতুল্লাহি                    আলাইহি                    “আসসিরাতুল  হালভিয়্যায়”,         ইমাম        বায়হাকী       রাহমাতুল্লাহি আলাইহি    “দালায়েলুন  নবুওয়াতে”,  আব্দুল  হক মোহাদ্দেস       দেহলভী       রাহমাতুল্লাহি        আলাইহি   “মাদারেজুন নবুওয়াতে”, আজলুনী  রাহমাতুল্লাহি আলাইহি   “কাশফুল  খিফাতে”  উক্ত    হাদীসখানা সংকলন করেন। হাদীসখানা নিম্নরুপঃ
عَنْ جَابِرِبْنِ َعبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّي اللهُ  عَلَيْهِ  وَسَلَّمَ بِاَبِي اَنْتَ  وَ   اُمِّي اَخْبِرْنِي عَنْ اَوَّلَ شَيٍ  خَلَقَهُ اللهُ تَعَلَي قَبْلَ الْاَشْيَاِء قَالَ يَا جَابِرُ اِنَّ اللهَ تَعَالَي خَلَقَ قَبْلَ الْاَشْيَاءِ نُورَ نَبِيِّكَ مِنْ  نُوْرِهِ فَجَعَلَ  ذلِكَ النُّورُ   يَدُوْرُ بِاالْقُدْرَةِ  حَيْثُ  شَاءَ اللهُ تَعَالَي وَلَمُ يَكُنْ فِي ذلِكَ الوَقْتِ لَوْحٌ وَلَا قَلَمٌ وَلَا جَنَّتٌ وَلَا نَارٌ وَلَا مَلَكٌ وَلَا سَمَاءٌ وَلَا اَرْضٌ وَلَا شَمْسٌ وَلَا قَمَرٌ وَلَا جِنِّيٌّ وَلَا اِنْسِيٌِّ

অর্থাৎ-           “হযরত         যাবের         ইবনে         আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু        আনহু       বলেন        আমি        রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু     আলাইহি      ওয়া     সাল্লামকে     জিজ্ঞাসা   করলাম, হে আল্লাহর   রাসুল! আমার    পিতা  মাতা আপনার   উপর  উৎসর্গীত হোক, আমাকে  জানান সর্বপ্রথম   সমস্ত   বস্তুর   পূর্বে     আল্লাহ   পাক    কোন  বস্তুকে     সৃষ্টি    করেছেন?     নবী    করীম     সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়া   সাল্লাম  বললেন,  আল্লাহ  তায়ালা সর্বপ্রথম   সমস্ত   বস্তুর   পূর্বে    তার   নিজ    নূর   হতে তোমার নবীর নূর  সৃষ্টি করেছেন। তারপর আল্লাহ তায়ালার  ইচ্ছা  অনুযায়ী ঐ    নূর পরিভ্রমণ করতে থাকে।    আর    ঐ    সময়      ছিলো    না    কোন    লউহ মাহফুজ,   ছিলো   না    কলম,   ছিলো    না      বেহেস্ত,  ছিলো না  দোযখ,  ছিলো  না   ফিরিশতা, ছিলো না আসমান, ছিলো না জমিন, ছিলো না সূর্য্য,  ছিলো না চন্দ্র, ছিলো না জিন, ছিলো না মানব।”

উক্ত হাদীসে বর্ণিত مِنْ نُوْرِهِ বা  তাঁর নিজ নূর  হতে শব্দটির ব্যাখ্যায় মোল্লা   আলী   ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি    মিরকাত  শরহে  মিশকাতে  লিখেছেন- ‘আয় মিন লামআতি   নূরিহী’   অর্থাৎ- তাঁর   আপন যাতি        নূরের       জ্যোতি       দিয়ে      নবীজিকে      সৃষ্টি করেছেন।     নবীজিকে     সরাসরি    আল্লাহর    নূরের  অংশ বললে শিরক হবে।

এই  হাদীস  খানা  দেওবন্দীদের  মুরব্বী   আশরাফ  আলী থানবীও তদ্বীয় গ্রন্থ  “নশরুত ত্বীবে” উল্লেখ করেন।    দেওবন্দীদের     আরও    একাধিক   মুরব্বী নবীজিকে     নূর    মেনে     নিলেও      তাদের    পরবর্তী প্রজন্ম নবীজিকে নূর বলে স্বীকার করে না।
পবিত্র     কোরআনের      সুরা      আম্বিয়ার     ১০৭      নং আয়াতে   কারীমাও নবী পাক  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম সৃষ্টি বলে প্রমাণ করে-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةَ لِّلْعَالَمِيْنَ
'অর্থাৎ-   “আমি   আপনাকে   জগত   সমূহের   জন্য  রহমত স্বরুপ প্রেরণ করেছি।”

আল্লাহ পাক নিজের  ব্যাপারে বলেছেন  رَبُّ  الْعَالَمِيْنَ অর্থাৎ-    “জগতসমূহের    রব”,    আর    প্রিয়    নবীর  ব্যাপারে             বলেছেন            رَحْمَةَ           لِّلْعَالَمِيْنَ           অর্থাৎ- “জগতসমূহের           রহমত”।           আল্লাহ           পাকের  রবুবিয়াত     যতটুকু      জায়গার      জন্য,       প্রিয়     নবী সাল্লাল্লাহু       আলাইহি     ওয়া     সাল্লামের      রহমতও  ততটুকু জায়গার জন্য। কিন্তু এমন নয় যে, নবীজি মাত্র ৬৩ বছরের হায়াতে জিন্দেগীর সময়টুকুতেই তিনি রহমত। তাহলে তো  পূর্ববর্তী  এবং  পরবর্তী সকল    সৃষ্টি    তাঁর     রহমত    থেকে     বঞ্চিত     হবে। সেক্ষেত্রে     অত্র     আয়াতের    যথার্থতা    থাকে     না।  অতএব, তিনি সকল সময়ের, সকল সৃষ্টির জন্যই রহমত।   আর   পৃথিবীর    শুরু   থেকে    সকল   সৃষ্টির জন্য  রহমত   হতে   হলে    তাদের  পূর্বেই  নবীজির  অস্তিত্ব  থাকা    বাঞ্চনীয়।   কেননা    নবীজি   সৃষ্টি  না হলে   বা     তাঁর   অস্তিত্ব     না   থাকলে   তিনি   রহমত হবেন  কিভাবে?  অতএব,  বলা  যায়    যে,   প্রতিটি সৃষ্টি   তার   অস্তিত্ব     লাভ   করার   পর   রব    হিসেবে পেয়েছে আল্লাহকে এবং রহমত হিসেবে পেয়েছে নবী   করীম  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়া  সাল্লামকে। এইভাবে ব্যাখ্যা করলেই এই  আয়াতের যথার্থতা প্রমাণিত  হয় এবং সাথে সাথে  এও  প্রমাণিত   হয় যে    প্রিয়    নবী   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি    ওয়া    সাল্লাম আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি এবং নূরের সৃষ্টি।

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত অপর  এক হাদীসে  নবী করীম   সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
كُنْتُ    نُوْرًا  بَيْنَ   يَدَيِ رَ بِّي قَبْلَ خَلْقِ   ادَمَ عَلَيْهِ الصَّلَوةُ  والسَّلاَمْ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفِ عَامٍ
অর্থাৎ- “আমি  আদম  সৃষ্টির  চৌদ্দ  হাজার বৎসর  পূর্বে    আমার    প্রতিপালকের   নিকট    নূর    হিসেবে বিদ্যমান ছিলাম।” (আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যা, বেদায়া ও নেহায়া, আনওয়ারে মোহাম্মদীয়া)

পবিত্র কোরআনে  নবী  করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নূর এবং  তিনি যে প্রথম সৃষ্টি এই ব্যাপারে অনেক  আয়াতে প্রত্যক্ষ ও  পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন  সুরা মায়েদার ১৫  নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
قَدْ جَاءَ كُمْ مِنَ اللهِ نُوْرٌ وَّ كِتَابٌ مُّبِيْنٌ
অর্থাৎ- “নিশ্চয়ই  তোমাদের নিকট আল্লাহর  পক্ষ  থেকে নূর এবং প্রকাশ্য কিতাব এসেছে।”

উল্লেখিত আয়াতে নূর দ্বারা হুজুরে  পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়া   সাল্লামকে  বুঝানো  হয়েছে।    এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন   বিশিষ্ট সাহাবী  হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে         আব্বাস          রাদিয়াল্লাহু          আনহু          তদ্বীয় “তাফসীরে ইবনে   আব্বাসে”, ইমাম   জালালুদ্দিন সুয়ুতী           রাহমাতুল্লাহি          আলাইহি         “তাফসীরে জালালাইনে”,         ইমাম         বাগভী           রাহমাতুল্লাহি আলাইহি “মাআলিমুত তানযীলে”, ইমাম মাহমুদ আলুসী           বাগদাদী           রাহমাতুল্লাহি           আলাইহি  “তাফসীরে  রুহুল     মাআনীতে”,  ইমাম   ফখরুদ্দিন রাযী            রাহমাতুল্লাহি            আলাইহি           “তাফসীরে কাবীরে”।     এছাড়াও    আরও   অসংখ্য    তাফসীর গ্রন্থে এই   আয়াতে নূর  দ্বারা হুজুর  পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়া   সাল্লামকে   বুঝানো   হয়েছে   বলে  স্বাব্যস্থ করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআন মাজীদের সুরা  আনআমের ১৬৩ নং   আয়াতে   নবীজি   প্রথম    সৃষ্টি     হওয়ার    ইঙ্গিত রয়েছে-
لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ بِذَلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
অর্থাৎ-    “তার    (আল্লাহর)      কোন     শরীক      নাই। আমার   প্রতি   এটাই   হুকুম   হয়েছে   এবং   আমিই  সর্বপ্রথম মুসলিম।”

অত্র আয়াতে ‘আমিই সর্বপ্রথম মুসলিম’  এর দ্বারা ইঙ্গিত করে যে, তিনিই সর্বপ্রথম সৃষ্টি। কারণ যদি আদম আলাইহিস সালাম প্রথম সৃষ্ট মানুষ হতেন, তাহলে তো তিনিই হতেন প্রথম মুসলিম।

এই  আয়াতের  ব্যাখ্যায়    আল্লামা  মাহমুদ  আলুসী বাগদাদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি “তাফসীরে রুহুল মাআনীতে” বলেন-
وَ قِيْلَ هذَا اِشَارَةُ اِلي قَوْلِه عَلَيْهِ الصَّلوةُ وَالسَّلَامْ اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِيْ-
অর্থাৎ-  “আলোচ্য আয়াতের দ্বারা রাসুলে পাকের ঐ  বানীর    দিকে  ইঙ্গিত  করা  হয়েছে  যে,   নবীজি বলেন- সর্বপ্রথম আল্লাহ  তায়ালা আমার  নূর সৃষ্টি  করেছেন।”

এ  প্রসঙ্গে  আরেকখানা  হাদীস  এসেছে  যা  ইমাম  কাসতুলানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি “মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাতে”, আল্লামা   মাহমুদ আলুসী বাগদাদী রাহমাতুল্লাহি           আলাইহি           “তাফসীরে           রুহুল  মাআনীতে”,    আজলুনী      রাহমাতুল্লাহি     আলাইহি “কাশফুল খিফাতে” উল্লেখ করেন-
كُنْتُ اَوَّلَ النَّبِيِّيْنَ فيِ الْخَلْقِ وَاخِرِهِمْ فيِ الْبَعْثِ
অর্থাৎ-  “সৃষ্টির  দিক   থেকে   আমি  ছিলাম    সকল নবীর    প্রথম   নবী।     আর   প্রেরণের   দিকে   থেকে  আমি হলাম নবীগণের শেষ নবী।”

ইমাম বায়হাকী এবং ইবনু আসাকীর আরেকখানা হাদীস বর্ণনা করেন-
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ اَنَّ  رَسُوْلَ اللهِ  صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ  لَمَّا خَلَقَ  اللهُ ادَمَ   اَرَاهُ بُنَيَّه  فَجَعَلَ يَري فَضَائِلَ بَعْضُهُمْ   عَلَي بَعْضٍ فَرَاي نُوْرًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ فَقَالَ يَا رَبُّ مَنْ هذَا قَالَ هذَا اِبْنُكَ اَحْمَدُ وَهُوَ اَوَّلُ وَهُوَ اخِرُ وَهُوَ اَوَّلُ شَافِعٍ
অর্থাৎ-   “হযরত  আবু  হুরায়রা   রাদিয়াল্লাহু  আনহু হতে  বর্ণিত যে,  নিশ্চয়ই আল্লাহর    রাসুল ইরশাদ  করেন      যখন      আল্লাহ     তায়ালা       হযরত      আদম আলাইহিস  সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে  তার   সন্তানদিগকে   দেখালেন।    অতঃপর    হযরত  আদম  আলাইহিস    সালাম  তাদের   একের   উপর অন্যের     শ্রেষ্ঠত্ব     অবলোকন     করতে     লাগলেন। অবশেষে   তিনি   তার     বংশধরদের   মধ্যে   একটি চমকদার    নূর     দেখতে     পেলেন    এবং     জিজ্ঞাসা করলেন-  হে রব, এটি  কে?  আল্লাহ  বললেন-  এ তোমার আওলাদ “আহমাদ”।  তিনি  (সৃষ্টির দিক থেকে)     সর্বপ্রথম   এবং   (প্রেরণের     দিক    থেকে) শেষ।           তিনিই           সর্বপ্রথম           শাফায়াতকারী।” (দালায়েলুন         নবুওয়াত,        খাসায়েসুল         কুবরা,  মাওয়াহেবুল লাদুনিয়া)

আল্লামা     ইবনে     কাসির     “আল     বিদায়া     ওয়ান  নিহায়াতে”           এবং           ইমাম          হাকেম           “আল মুসতাদরাক”    গ্রন্থে    নবীজির    সম্মাণিত   চাচা   ও  সাহাবী       হযরত      আব্বাস       রাদিয়াল্লাহু       আনহুর  একখানা কাসিদা  উল্লেখ করেন। একবার হযরত  আব্বাস   রাদিয়াল্লাহু আনহু হুজুরে পাক   সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়া  সাল্লামের  দরবারে আরজ  করেন, ইয়া      রাসুলাল্লাহ!      আমি      আপনার     শানে     কিছু  কাসীদা পাঠ  করতে চাই। তখন  নবীজি  ফরমান- ঠিক    আছে    পড়ুন।    অতঃপর     হযরত     আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু পড়তে লাগলেন-
وَاَنْتَ لَمَّا وُلِدْتَ اَشْرَقَتِ الْاَرْضُ وَضَائَتْ بِنُوْرِكَ الْاُفُقُ
অর্থাৎ-   “আর    যখন    আপনি    আগমন    করলেন,  পৃথিবী আলোকিত হয়ে   গেল এবং আপনার  নূরে আলোকিত হয়ে গেল চতুর্দিক।”
উপরোক্ত দলিল সমূহের ভিত্তিতে একথা প্রমাণিত হয়    যে    হুজুরে    পাক    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়া  সাল্লাম    আল্লাহ   পাকের    প্রথম    সৃষ্টি    এবং    তিনি আল্লাহ      পাকের      জাতি     নূরের     জ্যোতি      হইতে পয়দা।  আর     এই  বৈশিষ্ঠ্যের   দ্বারা  আল্লাহ   পাক  তাঁর হাবীবকে  পৃথিবীর সমস্ত  সৃষ্টি থেকে আলাদা মর্যাদা দিলেন। তবে   পবিত্র কোরআনের   আয়াত দ্বারা  অনেকের   মনে   কিছুটা    সংশয়ের  সৃষ্টি  হয়। সুরা    কাহাফে    ১১০   নং   আয়াতে    আল্লাহ      পাক বলেন-
قُلْ اِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ
অর্থাৎ-   “হে  নবী আপনি  বলুন- আমি  তোমাদের মতোই একজন বাশার (মানুষ)।”

এই   আয়াত  দ্বারা  নবী   পাক    সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া  সাল্লাম  বাহ্যত আমাদের  মতোই মানুষ বলা হয়েছে।   কিন্তু  তা   নবীজির  নূর   হওয়ার    দাবীকে ভুল  প্রমাণ  করে না। কেননা    পৃথিবীর শুরু  থেকে  কেয়ামত      পর্যন্ত    সকল    মানুষ    একইভাবে    সৃষ্টি হলেও কিছু ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
১।   হযরত    আদম   আলাইহিস    সালাম      সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি।
২।     হযরত     হাওয়া      আলাইহিস      সালাম       বাবা  আদমের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি।
৩।     হযরত     ঈসা       আলাইহিস     সালামের       সৃষ্টি  হয়েছেন  হযরত  জিবরাঈল আলাইহিস  সালামের ফুতকার থেকে।

হযরত  ঈসা  আলাইহিস  সালামের   সৃষ্টি     সম্পর্কে পবিত্র     কোরআনে    কারীমের     সুরা     মারইয়ামের ১৯-২১   নং   আয়াতে   বর্ণনা   এসেছে,   জিবরাঈল  আলাইহিস সালাম  হযরত  মরিয়মের  কাছে এসে  বললেন-
قَالَ اِنَّمَا  أَنَا رَسُوْلُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلاَمًا زَكِيًّا- قَالَتْ أَنَّي يَكُوْنُ غُلاَمٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ وَلَمْ أَكُ بَغِيًّا- قَالَ كَذلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَلِنَجْعَلَهُ أَيَةً لِّلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّا وَكَانَ أَمْرًا مَّقْضِيًّا
অর্থাৎ- “তিনি বললেন- আমি তোমার পালনকর্তা প্রেরিত। আমি তোমাকে এক পুত্র সন্তান দান করে যাবো।  হযরত  মরিয়ম   বললেন-   কিরুপে  আমার পুত্র হবে, যখন কোন মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিনীও নই।  হযরত  জিবরাঈল আলাইহিস   সালাম   বললেন-      এমনিতেই   হবে। তোমার  পালনকর্তা  বলেছেন,  এটা    আমার  জন্য সহজ     সাধ্য    এবং    আমি    তাকে     মানুষের    জন্য একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরুপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।”

হযরত    ঈসা    আলাইহিস    সালামের    মাতা    বিবি  মরিয়ম   আলাইহিস   সালাম   অবিবাহিত   ছিলেন।  সেই কুমারী অবস্থায় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের  ফুতকারের  মাধ্যমে   আল্লাহ   পাক  তার গর্ভে সন্তান দান করেন। আল্লাহ পাক চাইলে   কী   না করতে পারেন?

আল্লাহ       পাক        যে       হযরত       ঈসা         আলাইহিস সালামকে পিতা ছাড়া সৃষ্টি করলেন  তার পেছনে বিরাট     রহস্য      লুকায়িত।     এই      রহস্যের       ভেদ আল্লাহই  সবচেয়ে  ভালো জানেন।  হযরত  আদম হাওয়ার পর থেকে  আজ   পর্যন্ত  এই পৃথিবীর শত শত কোটি  মানুষ একভাবে পিতা  মাতার মাধ্যমে দুনিয়াতে        আসলো        মাঝখানে        হযরত        ঈসা  আলাইহিস     সালামকে   আল্লাহ    এমন   ব্যতিক্রমী ভাবে   দুনিয়াতে পাঠানোর  কারণ কী? এর কারণ সম্ভবত    এমন    হতে    পারে    যে,    যারা   প্রিয়   নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নূর হওয়া নিয়ে সন্দেহ  প্রকাশ  করবে  তাদের  জন্য  আল্লাহ  পাক  একটি বার্তা দিয়েছেন এই রকম যে, আমি যেমন স্বাভাবিক     প্রক্রিয়ায়     মানুষ   তৈরি    করতে   পারি, তেমনি     আমি    স্বাভাবিকের    ব্যতিক্রমও     করতে  পারি।  হযরত   ঈসা  আলাইহিস  সালামকে   যেমন পিতা ছাড়া   একটি  ফুতকার  থেকে তৈরি করতে  পারি,    তেমনি   পিতা    মাতার    মাধ্যমে    স্বাভাবিক মানুষের   পরিবর্তে     নূরের   মানুষও    তৈরি   করতে পারি।  এবং   এটা   আমার   জন্য  বেশ  সহজ  সাধ্য ব্যাপার।

হযরত  ঈসা   আলাইহিস   সালাম  স্বাভাবিক  মানব সৃষ্টি   থেকে   ভিন্ন   ভাবে    সৃষ্টি     হয়েও   তিনি   কিন্তু মানুষ।  ঠিক  তেমনি  ভাবে     হুজুর  পাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া  সাল্লাম  নূরের  সৃষ্টি  হলেও  বাশার  বা    মানুষ     হওয়াতে      কোন    বাধা    নেই।    আবার বাশার    বা   মানুষ     হলেও   নূরের   তৈরি    হওয়াতে কোন   বাধা   নেই।   কারণ    ব্যতিক্রমী     দৃষ্টান্ত   তো আল্লাহ   পাকের   সৃষ্টি  জগতের  মধ্যেই  বিদ্যমান। এখানে একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে,
১।    সকল    মানুষকে    মাটির    তৈরি    বলা    হলেও  একমাত্র     হযরত     আদম     আলাইহিস     সালামের  দেহই    সরাসরি  মাটি   দ্বারা   তৈরি।  আবার   আদম আলাইহিস সালামের দেহ মাটি দ্বারা তৈরি হলেও তাঁর  শরীরে  কিন্তু  মাটি  ছিলো  না।  সেই    মাটিকে আল্লাহ  পাক   রুপান্তর  করে    হাড়,     গোশত  এবং চামড়ার সমন্বয়ে একটি দেহ তৈরি করলেন।
২।  আমাদের দেহ কিন্তু  সরাসরি  মাটি দ্বারা  তৈরি না বরং শুক্রানু থেকে সৃষ্টি। কিন্তু আমাদের দেহও হযরত আদম আলাইহিস সালামের মতোই একই রকম    হাড়,     গোশত     এবং     চামড়ার    সমন্বয়ে  তৈরি।
৩।  হযরত  হাওয়া  আলাইহিস  সালাম  কিন্তু  মাটি  থেকেও     সৃষ্টি  না,  শুক্রানু    থেকেও   সৃষ্টি  না   বরং তিনি বাবা  আদমের বাম পাজড়ের হাড়     থেকে সৃষ্টি।  অথচ  হযরত  হাওয়া  আলাইহাস  সালামের  দেহও    কিন্তু    একই      রকম   হাড়,    গোশত   এবং চামড়ার সমন্বয়ে তৈরি।
৪।   আবার  হযরত   ঈসা  আলাইহিস  সালাম  কিন্তু মাটি  থেকেও  সৃষ্টি  না,  শুক্রানু  থেকেও  সৃষ্টি    না,  কারো  হাড়   থেকেও  সৃষ্টি  না   বরং  তিনি  হযরত  জিবরাঈল  আলাইহিস  সালামের  ফু  থেকে  সৃষ্টি।  অথচ   হযরত   ঈসা   আলাইহিস   সালামের   দেহও কিন্তু  একই    রকম  হাড়,  গোশত  এবং  চামড়ার সমন্বয়ে তৈরি।

অর্থাৎ   সৃষ্টির   উপাদান    যাই    হোক    না   কেন   তা থেকে হাড়, গোশত ও চামড়ার মানব দেহ তৈরি করা    আল্লাহর   জন্য   খুবই   সহজ।   অতএব     নবী পাক   সাল্লাল্লাহু    আলাইহি   ওয়া   সাল্লামের    দেহে  হাড়, গোশত  এবং চামড়া থাকলেও তাঁর সৃষ্টির উপাদান নূর। যেমন বেহেশতের হুর   নূরের  তৈরি হলেও      তাদের      দেহেও     হাড়,     গোশত       এবং চামড়া থাকবে। একটু ব্যাপক ভাবে চিন্তুা করলে হিসাব    খুব    সহজে     মিলে   যায়।     নবীজিকে   নূর মানতে কোন বাধা থাকে না।

অবশেষে     নবীপাকের   সৃষ্টি   রহস্য   সম্পর্কে    এই কথা বলা যায় যে, তিনি  বাহ্যত    আমাদের মতো  বাশার বা মানুষ কিন্তু হাকীকতে তিনি নূর।

প্রকাশিতে আপন জাতে
সৃজিলেন রব তোমারি নূর,
কুল কায়েনাত তোমা হতে
তুমি হাবিব আপন প্রভুর।

Facebook page Click Here

0 Response to "(ASCC TV NEWS).প্রথম     অধ্যায়ঃ     দুনিয়াতে    আগমনের    পূর্বে নবীজির মর্যাদা নূরে মোহাম্মদী আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি "

Banner 300*250

Banner 160*600

advertising articles 2

Banner 728*90