-->

Nativ

Banner 160*300

আল্লাহর দিকে আহ্বান (মানুষের কর্তব্য ও মুমিনের কর্তব্য) (সুফিয়ান সওরী)

আল্লাহর দিকে আহ্বান (মানুষের কর্তব্য ও মুমিনের কর্তব্য) (সুফিয়ান সওরী)

মানুষের কর্তব্য
আল্লাহ্ মানুষকে ব্যাপক জ্ঞান দান করেছেন। কিন্তু সেই জ্ঞানও খুব সীমিত। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জ্ঞানের তুলনায় সেই জ্ঞান এতই তুচ্ছ যে তা হিসাবের মধ্যেই আসে না।
এই সীমিত জ্ঞানের সাহায্যে কোন নির্ভুল জীবন বিধান রচনা করা মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। আবার দুনিয়ায় অবস্থানকালে সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে মানুষ ইবলিসের শিকারে পরিণত হবে, সেটাও আল্লাহর অভিপ্রেত নয়। তাই মানুষের জন্য জীবন বিধান রচনার দায়িত্ব আল্লাহ্ নিজেই নিয়েছেন।

প্রথম মানব আদম (আ) এবং তাঁর স্ত্রীকে পৃথিবীতে পাঠানোর প্রাক্কালে আল্লাহ্ মানুষের জন্য জীবন বিধান পাঠানোর ওয়াদা ঘোষনা করেছেন।
ﻗُﻠْﻨَﺎ ﺍﻫْﺒِﻄُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ۖ ﻓَﺈِﻣَّﺎ ﻳَﺄْﺗِﻴَﻨَّﻜُﻢْ ﻣِﻨِّﻲ ﻫُﺪًﻯ ﻓَﻤَﻦْ ﺗَﺒِﻊَ ﻫُﺪَﺍﻱَ ﻓَﻠَﺎ ﺧَﻮْﻑٌ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﻫُﻢْ ﻳَﺤْﺰَﻧُﻮﻥَ
“অতঃপর আমার নিকট থেকে তোমাদের জন্য হিদায়াত আসবে। যারা তা অনুসরন করে চলবে তাদের ভয় ও চিন্তার কোন কারণ থাকবে না”- আল বকারাঃ৩৮
একেতো সীমিত জ্ঞানের অধিকারী হবার কারণে মানুষের পক্ষে কোন নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ জিবনবিধান রচনা করা সম্ভবপর নয়। তদুপরি আল্লাহর কাছ থেকে জীবন বিধান আসার পর অন্য কোন জীবন বিধান রচনা করা এবং সেই মুতাবিক জীবন যাপন করার অধিকার ও মানুষের নেই।
আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবন বিধান উপেক্ষা করে মানুষ যদি অন্য কোন জীবন বিধান রচনা করে এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করে তবে তো মানুষ ইবলীসের যথার্থ শাগরিদেই পরিণত হবে। ইবলিসের মতই সে বিদ্রোহী বলে গন্য হয়। তখন ইবলীসের মত তাঁর উপর ও আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসে।
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺪِّﻳﻦَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡُ ۗ
“আল্লাহর নিকট একমাত্র স্বীকৃত জীবন বিধান হল আল ইসলাম”। – আলে ইমরানঃ ১৯
বাস্তব অবস্থা যখন এই তখন আপন মনের ইচ্ছা-বাসনা অথবা অন্য কোন ব্যক্তির ইচ্ছা-বাসনার আনুগত্য না করে মানুষের জন্য শোভনীয় হচ্ছে একমাত্র আল্লহর ইচ্ছা-বাসনার আনুগত্য করা।
এছাড়া অন্য কোন আনুগত্যই আল্লহর পছন্দনীয় নয়।
ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺒْﺘَﻎِ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺩِﻳﻨًﺎ ﻓَﻠَﻦْ ﻳُﻘْﺒَﻞَ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮِﻳﻦَ
“যেই ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন বিধান অবলম্বন করতে চায় তার কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যেই থাকবে”। – আলে ইমরানঃ ৮৫
প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজাহানের যাবতীয় সৃষ্টি আল্লাহর নির্দেশের নিকট মাথা নত করে আছে। আল্লহর নির্ধারিত আইনগুলো মেনে বিশ্বলোকের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বিশ্বজাহান আল্লাহর আইন মেনে চলছে বলেই বিশ্বের সর্বত্র শান্তি ও শৃংখলা বিরাজ করছে।
বিশ্বব্যাপী আল্লাহর যে সব আইন কার্যকর রয়েছে সেগুলোর সাথে সংগতিশীল আইন তৈরী করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। আবার নিজেদের জন্য জীবন বিধান রচনা করে তার সাথে সংগতিশীলরূপে বিশ্বলোকের সব আইনকে নতুনভাবে সাজিয়ে নেয়াও সাধ্যাতীত। এমতাবস্থায় বিনা দ্বিধায় আল্লাহর বিধান মেনে চলার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত।
ﺃَﻓَﻐَﻴْﺮَ ﺩِﻳﻦِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻟَﻪُ ﺃَﺳْﻠَﻢَ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻃَﻮْﻋًﺎ ﻭَﻛَﺮْﻫًﺎ ﻭَﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻳُﺮْﺟَﻌُﻮﻥَ
“এসব লোক কি আল্লাহর দ্বীন পরিত্যাগ করে অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চায়? অথচ আসমান ও পৃথিবীর সব কিছুই ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক তাঁর আনুগত্য মেনে নিয়েছে। আর মূলতঃ তাঁর দিকেই সকলকে ফিরে যেতে হবে।”— আলে ইমরানঃ ৮৩
আল্লাহর বিধান মেনে না নেয়ার মানেই কুফর। যারা এই কুফর অবলম্বন করে তাদের পরিণাম ভয়াবহ। পৃথিবীর জীবনে কুফর অবলম্বন করেও আখিরাতের জীবন কোন না কোন প্রকারে নাজাত পাওয়া যাবে, এ ধারণা পোষণনিতান্তই বোকামী। আল্লাহ বলেন—
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻭَﻣَﺎﺗُﻮﺍ ﻭَﻫُﻢْ ﻛُﻔَّﺎﺭٌ ﻓَﻠَﻦْ ﻳُﻘْﺒَﻞَ ﻣِﻦْ ﺃَﺣَﺪِﻫِﻢْ ﻣِﻞْﺀُ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺫَﻫَﺒًﺎ ﻭَﻟَﻮِ ﺍﻓْﺘَﺪَﻯٰ ﺑِﻪِ ۗ ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ ﻭَﻣَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﻧَﺎﺻِﺮِﻳﻦَ
“যারা কুফর অবলম্বন করলো এবং সেই অবস্থায় প্রাণত্যাগ করলো তাদের কেউ যদি শাস্তি থেকে বাচার জন্য পৃথিবী ভরা পরিমাণ স্বর্ণও বিনিময় হিসেবে হাজির করে, তবুও তা কবুল হবে না। এদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই”।– আলে ইমরানঃ ৯১
ইবলীসের দুশমনী থেকে আত্মরক্ষা করা ও আখিরাতের আযাব থেকে নাজাত পাওয়ার উপায় হচ্ছে বিশুদ্ধ মন নিয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা এবং আল্লাহর বিধান মুতাবিক জীবন গড়ে তোলা। আত্মরক্ষার এই নির্ভুল পথেই রাব্বুল আলামীন বিশ্ব মানবতাকে আহবান জানাচ্ছেন এভাবেঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻗَﺪْ ﺟَﺎﺀَﻛُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻜُﻢْ ﻓَﺂﻣِﻨُﻮﺍ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻟَﻜُﻢْ ۚ
“হে মানব জাতি, এই রাসূল তোমাদের রবের নিকট থেকে সত্য বিধান সহ এসেছে। তোমরা ঈমান আন, এতেই তোমাদের কল্যাণ”। –সূরা আননিসাঃ ১৭০

মু’মিনের কর্তব্য

আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনে কেবল ব্যক্তি চরিত্র গঠনের তৎপরতা চালিয়েই কোন ব্যক্তি আল-ইসলামের পূর্ণাংগ দাবী পরিপূরণ করতে পারে না। ইসলাম শুধু মাত্র ব্যক্তি জীবন নিয়ন্ত্রণ করার কিছু নিয়ম কানুনের নাম নয়। এটি একটি সর্বব্যাপ্ত জীবন বিধান। জীবনের সকল বিভাগ সম্পর্কেই তাঁর রয়েছে সুস্পষ্ট পথ-নির্দেশ।
বক্তি জীবনে ইসলামের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা যতোখানি সহজ, সমাজ জীবনে ইসলামের অনুশাসন প্রবর্তন করা ততোখানিই কঠিন।
পথের এই কঠিনতা দূর করেই আল্লাহর অনুগত বান্দাদেরকে সমাজের সকল ক্ষেত্রে ইসলামকে বিজয়ী অদর্শরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। একেই বলা হয় ইকামাতে দ্বীন।
ইকামাতে দ্বীন কোন সহজসাধ্য কাজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত বিরামহীন সংগ্রাম। ইকামাতে দ্বীনের জন্য পরিচালিত সর্বাত্মক সংগ্রামকেই আল কুরআনে আল জিহাদু ফী সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে জিহাদ নামে আখ্যায়িত করেছে। বাংলা ভাষায় একেই বলা হয় ইসলামী আন্দোলন।
ইকামাতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করলে সর্বপ্রথম যেই বিষয়টির উপর স্বাভাবিক ভাবেই দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় তা হচ্ছে আদ-দাওয়াতু ইলাল্লাহ বা আল্লাহর দিকে আহবান।
ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য নিজে আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করাই যথেষ্ট নয়, সেই ঈমানের আলো অন্যদের মাঝে বিকশিত করাও একান্ত প্রয়োজন। প্রতি যুগেই ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও কর্মীগণ নিষ্ঠার সাথে এই কর্তব্য পালনের চেষ্টা করেছেন।

Related Posts

0 Response to "আল্লাহর দিকে আহ্বান (মানুষের কর্তব্য ও মুমিনের কর্তব্য) (সুফিয়ান সওরী)"

Banner 300*250

Banner 160*600

advertising articles 2

Banner 728*90