
ধর্ষণ আর ধর্ষণ
দেশে যখনই দু চারটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তখনই হয়তো ব্যবসায়িক স্বার্থে দু চারটা মিডিয়া সংবাদ পরিবেশন করে, পাব্লিক তা একটু আড়চোখে দেখে এবং সবশেষে সংবাদ হারিয়ে যায়। মাঝখান থেকে উৎসাহ পায় ধর্ষকেরা। প্রশাসনকে টাকা খাইয়ে সব সত্যকে মিথ্যা করে ধর্ষক পরিবার, কখনোবা ক্ষমতার জোরে, কখনো বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ম্যানেজ করে সব ঘৃণ্যতাকে বৈধতা এনে দেয়।
কিন্তু থামে না ধর্ষিতা ও ধর্ষণের শিকার পরিবারের আহাজারি। উল্টো ধর্ষিতার দায় তার পোশাক আর চালচলন। ধর্ষিতাকে ডাকা হয় বেশ্যা আর বাজে মেয়ে বলে, হয়তো অপমান সহ্য করতে না পেরে নীরবে আত্মহত্যা করে কিংবা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এভাবেই চলছে আমাদের ধর্ষণমনস্তাত্ত্বিক সমাজের ধর্ষণ ম্যানেজের আয়োজন।
কখনো বিয়ের শাড়িই পড়তে পারে না ধর্ষিতা, কারণ ধর্ষিতাকে কে ই বা বিয়ে করতে চায়। আগে দেখতাম মানবজমিন পত্রিকায় প্রচুর ধর্ষণের খবর, তরুণ সমাজ সেসব সংবাদকে চটি গল্প ভেবে খুব হাস্যরস করতো এবং এটাকে একটা সিনেমার গল্পের রূপ দিতো।
সেদিন মনে হয়েছিল যে, ঐ পোলার ও উপযুক্ত বোনটাকে ওর সামনে কেউ ধর্ষণ করতে তবেই সে ব্যথা উপলব্ধি করতো। এলাকায় থাকতে মেয়েটার বিয়ে হয়নি, বাইরে গিয়ে হয়তো পারে। আবার দেখেছি কলোনিতে হতদরিদ্র রিকশাচালকের মেয়েকে ধর্ষণ করতে এক প্রভাবশালী কুকুরকে, যে ব্যাপারটা মাটি চাপা দিয়েছিল আরেক কুকুর জনপ্রতিনিধি যার প্রায়শই গমন ছিল বেশ্যালয়ে। নীরবে পরিবারটি এলাকা ছেড়ে চলে যায় অনেক দূরে।
মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনোর আগেই তার কপালে জুটে সিঁথির সিদুর। এভাবে বহু বোনকে দেখেছি নীরবে যাতনা ভোগ করতে, জীবন ছেড়ে পালাতে, নির্বাসিত হতে। কত সংখ্যালঘু মেয়ে এদেশে ধর্ষিত হয়ে ভারত পালিয়েছে, কারণ এদেশে অপবাদের মুখে সে টিকবে না, তার বিয়ের ফুলও ফুটবে না।
আজকে শুধু ধর্ষণের জন্য পোশাক, চালচলন,আর সংস্কৃতিতে দোষারোপ করে চেপে যায় ধর্মান্ধ আর ক্ষমতাধর নারী ভোগকারী গোষ্ঠী। পুরুষের পশুত্ব আর যৌনাঙ্গের কোন ত্রুটি নেই। যারা ধর্ষণের বিরোধিতা করে তারা যদিও সূফী হয় তাদের কপালে জুটে নারীবাদী, কমিউনিস্ট, রাষ্ট্রবিরোধী, এমনকি এথিয়িস্টের তকমা।
ধর্ষকরা যখন মঞ্চে উঠে সততার সনদ স্লোগানে কিনে নেয়, তখন ভাবি এ দেশটা কি আসলেই ভালো মানুষের দেশ। আমরা চিন্তায় বামপন্থী ডানপন্থী কিংবা মধ্যপন্থী, বাঙালি যাই হই না কেন আমরা আজো মানুষ হয়ে উঠতে পারি নি। আমরা বিপ্লবের ফসল ঘরে তুলতে বেপরোয়া কিন্তু আমাদের মা বোনদের চোখে মুখে ভাসমান কষ্ট আর হিংস্রতার ফসলের ছবি।
যখন পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করেছিল আমরা পাত্তা দেইনি, বলেছি এটা নিয়ে হৈ চৈ বামপন্থী আর সুবিধাভোগীদের কাজ, একে একে ঘটনা ঘটতে লাগলো আর আমরা পোশাক আর চলনের দোহাই দিয়ে একই যুক্তি দেখিয়েছি। সর্বশেষ তনু আর আফসানা এবং অতঃপর কতজন নাম অজানা লালসার শিকার হলো, আমরা নীরব রইলেম।
যারা এ ব্যাপারে কথা বললো তাদের কমিউনিস্ট, ফেমিনিস্ট বলে গালি দিলাম, বাতুল বললাম। আজ হযরত আলী ও আয়শার পক্ষে যখন আমরা বলছি, দু দিন আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর কথা বলছি তখনও একই যুক্তি এবং একই তকমা জুটতেছে।
পাঁচ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের জন্য দায়ী পোশাক আর সংস্কৃতি?
কাল যখন আপনার বোন বা মেয়ে কারো লালসার শিকার হবে তখনও কি আপনি হাসবেন?
সবকথার মূল কথা, ধর্ষকদের ক্ষমতা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমরা যদি জাগি সমন্বিত ভাবে সব অসম্ভব সম্ভব হবে।
'আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে,
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে'।
Raise your voice against rape & racism.
United we stand, devided we fall.
Culture & dress are not liable for rape.
Rape is a crime of patriarchal social system.
0 Response to "ধর্ষণ আর ধর্ষণ "
Post a Comment